পরিকল্পনা কমিশনে ইভিএম কেনার প্রস্তাব

একেকটি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনা হবে ৩ লাখ ৩৩ হাজার টাকায়। এজন্য ২ লাখ ইভিএম কিনতে ৬ হাজার ৬৬০ কোটি ২৯ লাখ টাকা চেয়েছে নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে চলতি অর্থবছরেই চাওয়া হয়েছে ৩ হাজার ৬৬৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এছাড়া আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রয়োজন হবে ২ হাজার ৯৯৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা। তবে পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৭১১ কোটি ৪৪ লাখ ২৩ হাজার টাকা প্রায়।

পরিকল্পনা কমিশনে ইভিএম কেনার প্রস্তাব

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ১৫০ আসনের জন্য ইভিএম কিনতে এমন প্রস্তাব। এজন্য ‘নির্বাচনি ব্যবস্থায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)-এর ব্যবহার বৃদ্ধি এবং টেকসই ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। বুধবার এটি এসেছে পরিকল্পনা কমিশনে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বুধবার যুগান্তরকে বলেন, ইভিএম একটা জালিয়াতির যন্ত্র। এই যন্ত্র কিনতে কৃচ্ছ সাধনের সময়ে এত বিপুল অঙ্কের টাকা ব্যয় করাটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ইভিএম নিয়ে যে অভিযোগ আছে সেগুলো সমাধান না করে এমন উদ্যোগ ঠিক নয়। এটা একদিকে অর্থের অপচয়, অন্যদিকে দেশের নির্বাচনব্যবস্থাকে জালিয়াতির দিকে নিয়ে যাওয়ার একটা চূড়ান্ত পদক্ষেপ। যদি এমন হতো-অতীতের অভিযোগগুলোর সমাধান হয়েছে, সুষ্ঠু ভোট করা যাচ্ছে, তাহলে গণতন্ত্রের স্বার্থে হয়তো এত টাকা খরচ করা যেত। তখন কোনো প্রশ্ন উঠত না।

সূত্র জানায়, প্রকল্পের লক্ষ্য সম্পর্কে নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হয়েছে, স্বচ্ছ নির্বাচনি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠনিকীকরণ করা হবে। সেই সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তির টেকসই ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বাড়ানো হবে। আরও বলা হয়েছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫০ আসনে ব্যবহার করা হবে ইভিএম। পর্যায়ক্রমে দেশের সব সংসদীয় আসনে এটি ব্যবহারের জন্য কাস্টমাইজেশন, সংরক্ষণ এবং অন্যান্য ব্যবস্থাপনা বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে। সেই সঙ্গে স্থানীয় সরকারের সব পর্যায়ের নির্বাচনে ব্যবহার করা হবে এই ইভিএম। নির্বাচনে সম্পৃক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ইভিএমে ভোট গ্রহণে সক্ষমতা বাড়ানো হবে। এছাড়া ভোটারদেরও ইভিএমে ভোট দেওয়া শিখন এবং সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবিত কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কর্মচারীদের বেতনভাতাসহ প্রায় ২২ ধরনের খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এছাড়া পরামর্শক সেবা খাতে ব্যয় হবে ২ কোটি ১৬ লাখ টাকা। মোটরযান মেরামত ও সংরক্ষণ খাতে ২১ কোটি ৭২ লাখ টাকা। আসবাবপত্র মেরামত ও সংরক্ষণে ৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।

অন্যান্য যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি মেরামত ও সংরক্ষণের জন্য খরচ হবে ২৪৫ কোটি টাকা। এছাড়া অন্যান্য ভবন ও স্থাপনা মেরামত ও সংরক্ষণ খাতে ২ কোটি টাকা এবং ভ্রমণ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে আড়াই কোটি টাকা। আরও আছে প্রশিক্ষণ খাতে ৫২ কোটি টাকা। আউটসোর্সিং জনবলের জন্য ১২৫ কোটি টাকা। অন্যান্য মেশিন ও সরঞ্জামাদি ভাড়া বা নিরাপত্তাসামগ্রী ভাড়া বাবদ ১৩১ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। সেই সঙ্গে আসবাবপত্র ও ওয়্যারহাউজের র‌্যাকের জন্য ৫৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এছাড়া অডিও-ভিডিও বা চলচ্চিত্র নির্মাণে চাওয়া হয়েছে ২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।

প্রকল্প প্রস্তাবে নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হয়েছে, ইভিএম-সংক্রান্ত আগের একটি প্রকল্পের আওতায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের বেজমেন্টে অস্থায়ীভাবে স্থাপন করা হয়েছিল ইভিএম কাস্টমাইজেশন সেন্টার। এখন সেখানে নির্বাচন কমিশনের নকশা অনুযায়ী পার্সোনালাইজেশন সেন্টার স্থাপনের কার্যক্রম চলছে।

ফলে কাস্টমাইজেশন সেন্টারটি দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। এজন্য এই ব্যয় বর্তমান প্রস্তাবিত প্রকল্পে ধরা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় ৫৪৩টি ডাবল কেবিন পিকআপ ভ্যান কেনা প্রয়োজন। যেহেতু প্রকল্পটি দেশব্যাপী বাস্তবায়িত হবে, সেহেতু কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য ৮টি জিপ এবং ৭টি মাইক্রোবাস প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমান চলমান প্রকল্প থেকে ৪টি জিপ এবং ৬টি মাইক্রোবাস প্রস্তাবিত প্রকল্পে ব্যবহার করা যাবে। 

প্রকল্প প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, ১৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এগুলোয় ভোটকেন্দ্র থাকবে প্রায় ২৫ হাজার। এগুলোর প্রতিটির ৭টি করে ভোটকক্ষে প্রায় ২ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ সেট ইভিএম প্রয়োজন হবে। এর সঙ্গে ভোটার শিখনের জন্য ৫০ হাজার সেট এবং প্রশিক্ষণে ব্যবহারের জন্য ২৫ হাজার সেট ইভিএম প্রয়োজন হবে। সর্বমোট ৩ লাখ ৩৮ হাজার সেট ইভিএম লাগবে। চলমান প্রকল্পের আওতায় কেনা ইভিএমের মধ্যে সচল রয়েছে ১ লাখ ৩৮ হাজারটি। এজন্য প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় ২ লাখ ইভিএম কেনা হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা জানান, প্রকল্পটির প্রস্তাব পাওয়ার পর এখন পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা করা হবে। সেখানেই দেখা হবে ইভিএম কেনাসহ প্রকল্পের ব্যয় বেশি ধরা হয়েছে কি না।