৫১ বছরেও বিশ্বমানের এয়ারলাইনস হওয়ার দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ বিমান
বাংলাদেশ বিমানের বহরে রয়েছে অভিজাতসব এয়ারক্রাফট। একই সঙ্গে ৫১ বছরে সরকারি সুযোগ-সুবিধার কোনো ঘাটতিও নেই। এমনকি ভুগতে হয়নি কোনো অর্থের অভাবও। এরপরও বিশ্বমানের এয়ারলাইনস হওয়ার দৌড়ে বহু পিছিয়ে বাংলাদেশ বিমান।
‘আকাশে শান্তির নীড়’ স্লোগানে ১৯৭২ সালের ৪ জানুয়ারি যাত্রা শুরুর পর হাঁটি হাঁটি পা পা করে ৫১ বছর পূর্ণ করেছে বাংলাদেশ বিমান। দীর্ঘ পথচলায় এই শান্তির নীড়ই কখনো কখনো যাত্রীদের কাছে অশান্তির কারণ হয়েছে। অসন্তোষের মূলে রয়েছে কেবিন ক্রু আর বিমানের কর্মকর্তাদের অশোভন আচরণ এবং প্রায় সব গন্তব্যের টিকিট নিয়ে অদৃশ্য কালোবাজারি।
এ বিষয়ে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এ টি এম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ বিমান যথেষ্ট অর্জন করেছে। কিন্তু বিমানকে আমরা যে উচ্চতায় দেখতে চাই, বিগত ৫১ বছরেও সেটি দেখতে পাইনি। আমরা প্রায়ই টিকিটিং নিয়ে অভিযোগ পাই বা গ্রাউন্ড সার্ভিস নিয়ে প্রায়ই অভিযোগ পাই। এমনকি তাদের ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়েও প্রায়ই আমরা অভিযোগ পেয়েছি। এসব থেকে তাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এসব কারণে বিমানের ভাবমূর্তি সংকটে রয়েছে।’
রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী সংস্থা হওয়ায় সবসময়ই সরকারের সর্বোচ্চ সহযোগিতা পেয়েছে বিমান। আর তাই বছর দশেক আগেও ভাড়ায় চলা বিমানের ঝুলিতে এখন ২১টি এয়ারক্রাফট। যার মধ্যে রয়েছে বোয়িং ট্রিপল সেভেন, ড্রিমলাইনারের মতো বিলাসবহুল উড়োজাহাজ।
৫১ বছরের যাত্রায় বিমান শুধু নিত্যনতুন এয়ারক্রাফটই বহরে যোগ করেনি; বরং তৈরি করেছে সেসব এয়ারক্রাফট রক্ষণাবেক্ষণের সক্ষমতাও। এতে প্রতিবছর সাশ্রয় হচ্ছে রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ অর্থ।
এরপরও আকাশপথের যাত্রায় দেশের মানুষের কাছে আজও প্রথম পছন্দ হতে পারেনি বিমান। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনার অভাবেই বিমান পিছিয়ে আছে।
বিমানের মান নিয়ে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এ টি এম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বিমানের এখন ভালো পরিকাঠামো আছে, হ্যাংগার আছে ও এয়ারক্রাফট আছে। তবে কী নেই? তাদের দক্ষ ও মানবিক জনশক্তি নেই। দক্ষ থাকতে পারে, কিন্তু মানবিক আছে কি না, আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে।’
সমসাময়িক এয়ারলাইনস থেকে বাংলাদেশ বিমান পিছিয়ে আছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘বিমানের ৫১ বছর পূর্ণ হলো, তবে তাদের আছে মাত্র ২১টি এয়ারক্রাফট। যেখানে বিমানের সমসাময়িক এয়ারলাইনসগুলোর কাছে দেড়শর বেশি এয়ারক্রাফট রয়েছে। তারা প্রায় ৫০ থেকে ৬০টা ডেসটিনেশনে যায়। বিপরীতে বিমান মাত্র ২৫ থেকে ২৬টি ডেসটিনেশনে যায়। যদিও আমাদের এয়ার সার্ভিস অ্যাগ্রিমেন্ট অনুযায়ী, প্রায় ৪০টির মতো ডেসটিনেশন যাওয়া যাবে।’
এয়ারক্রাফট ফ্রিড প্ল্যানিংয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও মাঝে মাঝে দেখি, এয়ারক্রাফটের স্বল্প দূরত্বে যাওয়া উচিত নয়, অথচ সেখানে এয়ারক্রাফট দিয়ে দেয়া হচ্ছে।’
এসব দুর্বলতা স্বীকার করেই, সব ধরনের অনিয়ম আর যাত্রী হয়রানির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিমান।
বিশ্বমানের এয়ারলাইনস হওয়ার পথে বিমানের প্রতিটি বিভাগকেই ঢেলে সাজানো হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শফিউল আজিম।
তিনি বলেন, ‘আমরা বিমানকে সম্পূর্ণ নতুনভাবে উপস্থাপন করব। এ ছাড়া আমরা যাত্রীদের ফিডব্যাক সঙ্গে সঙ্গে নিচ্ছি এবং কেউ যদি যাত্রীসেবার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ইচ্ছাকৃত গাফিলতি করে, আমরা সেটি সংশোধনের চেষ্টা করছি।’
মাইগ্রেশন টাইমের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মাইগ্রেশন টাইমে আমাদের কিছুটা সময় নিতে হয়েছে। আপনারা জানেন একটি সিস্টেম থেকে আরেকটি সিস্টেমে মাইগ্রেট করার ক্ষেত্রে আমাদের ট্রানজিশন লেভেলে কিছুটা সমস্যা হয়। আমরা এখন সম্পূর্ণরূপে ওয়েবনির্ভর টিকিটিংয়ে যাব এবং আমরা আমাদের মার্কেটিংও আরও উন্নত করব, যা আমাদের ফ্লাইট পরিচালনায় পরিলক্ষিত হবে।’
বহু বছর পর ২০২২ সালে আর্থিকভাবে লাভের মুখ দেখেছে বিমান। পাশাপাশি করোনার পর যাত্রী পরিবহনের হারও বেড়েছে।
তা ছাড়া শিগগিরই জাপানের নারিতায় নতুন রুটে ফ্লাইট চালুর পাশাপাশি নিউইয়র্কেও ফ্লাইট চালু নিয়ে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন শফিউল আজিম।